লিসেনার'স_ডায়েরি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান

লিসেনার'স_ডায়েরি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান

লিসেনার'স_ডায়েরি নিম্নবিত্ত পরিবারের  সন্তান

আমি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার
বয়স যখন ১৪/১৫ ঠিক তখন এক মধ্যবিত্ত
পরিবারের সন্তানের সাথে আমার বিয়ে হয়।
বিয়ের পর ভালোই সংসার করি কয়েকমাস।
খুব সুখে দিন কাটে আমার।
তারপর শুরু হয় আমার শ্বশুরের অকথ্য সব ভাষা।
তাও আমার স্বামীর আয় নিয়ে। যা কাজ করে
তা নাকি আমার স্বামী ঠিকমত খেতে
পারবে না। তারউপর আবার আমাকে কী করে
খাওয়াচ্ছে! আমার শ্বশুরের সব কথার একটাই
সারাংশ ছিলো। আর সেটা হলো যৌতুক।
আমাকে আর আমার স্বামীকে নানাভাবে
বকাঝকা আর গালিগালাজ করতে লাগলো!
একটা সময় আমি আমার বাবা আর বড় ভাইয়ের
কাছে গিয়ে টাকা চাই, আর বলি আমার
স্বামীকে বিদেশ পাঠাবো একটু ভালো
থাকার জন্য। অন্ততপক্ষে প্রতিনিয়ত শ্বশুরের
কথাতো শুনতে হবে না আমাদের।
আমার এ কথা শুনে আমার বাবা ও ভাইয়ের
মাথায় যেন বজ্রপাত হয়! বাবা বলে যে
আমরা তো ঠিকমত খেতেই পারি না, বিদেশ
যাবার টাকা কী করে যোগার করবো! আমিও
এটাই ভাবি। কিন্তু কিচ্ছু করার ছিলো না।
আমার বাবা তখন আমাদের যা জমি ছিলো
সব বিক্রি করে আমার স্বামী সুমনকে বিদেশ
পাঠায়। আমার শ্বশুর বাড়ি অনেক সম্পত্তি
ছিলো, কিন্তু তারা একটা টাকাও দেয়নি।
উল্টো বলেছিলো সুমন কিছু করতে পারবে না
আমার মত ফকিন্নিকে নিয়ে সংসার করলে!
কথাটা শুনে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। কিন্তু
বুঝতে পারিনি যে এর চেয়েও ভয়াবহ কোনো
সময় আমার আসবে!
সুমন যখন বিদেশ যায় তখন আমি দুই মাসের
অন্তঃসত্তা ছিলাম। তবুও সুমন বিদেশ গিয়ে
আমাকে টাকা পাঠানোর আগে তার
বাবাকে পাঠাতো। তারপর আমাকে পাঠাত।
বেশ কয়েকমাস যাবারপর সুমন খুব ভালো
টাকা পাঠানো শুরু করে।
তখন ভাবি এই বুঝি আমার দুঃখ দূর হলো!
আমার ফুটফুটে একটি ছেলে হলো। আমি খুব
অসুস্থ হয়ে পরি। তবুও আমার শ্বশুরবাড়ির কেউ
আসেনি আমাকে দেখতে। আমি তখন খুব
বেশি কষ্ট পাই। সুমনকে বলি। ও আমাকে
সান্ত্বনা দেয়। আর বলে সবকিছু একদিন ঠিক
হয়ে যাবে!
এ আশাতেই আমি থাকি। ভাবি হয়তো একদিন
সবকিছু আসলেই বদলে যাবে। নতুন একটা সূর্য
আসবে। সব আলোয় ভরে দেবে।
বছর দুই পর....
সুমন দুই মাসের ছুটিতে দেশে আসে। আমার
সাথে বাচ্চার সাথে ভালো কাটে ওর
দিননগুলো। এবং আমার জন্য আমার জীবনে
ওই সময়টা সর্বশ্রেষ্ঠ সময় ছিলো। আমরা খুব
ভালো কাটাই দিনগুলো।দুইমাস পর যখন সুমন
চলে যাবে আবার সুদূর প্রবাসে, তখন আমার
বাবা সুমনকে তার বাবার কাছে দোয়া
চাইতে যেতে বলে। সুমন তখন আমামার
শ্বশুরের কাছে যায় দোয়া চাইতে। আমার
শ্বশুর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সুমনকে বলে সুমনের
মৃত্যু যেন গাড়ি চাপা পড়ে হয়!
ডুমন সেদিন আমাকে কথাগুলো বলেলে
কান্না করেছিলো। আমি একজন ছেলে এতটা
কসন্না করতে দেখবো তা কখনই ভাবিনি।
আমি ওকে অনেক বোঝাই। কিন্তু ওর
কষ্টাটকে বিলুপ্ত করতে পারি না। ওর কথা
একটাই ছিলো বাবার কারণেই ও প্রবাসে
পাড়ি জমিয়েছে। সেই বাবারই এতটা রাগ
কেন!! যদি রাগ থাকেই তবে কী এভাবে
সন্তানকে কষ্ট দিতে পারে! তাও দূর দেশে
যাবার আগ মুহূর্তে!
আমার বাবাবা তখন সুমনকে খুব বোঝায়।
আমার ভাই বোঝায়। এমন ভাঙা মন নিয়েই
সুমন আবার দূর দেশে যাত্রা করে।
এই ঘটনার পরে আমি আর আমার শ্বশুর
যাবারও সাহস পাইনি। সবসময় কেন যানি
একটা ভয় কাজ করতো। আমি তাদেরকে
নিরাপত্তার বাঁধা মনেনে করতাম। বিশেষ
করে আমার সন্তানের জন্য। তাই আর যেতাম
না।
ছয় মাস পর...
হঠাৎ একদিন খবর এলো সুমন গাড়ির নিচে
চাপা পড়ে মারা গেছে! খবরটা পেয়ে আমি
ভাবতে থাকি আসলেই বাবার দোয়ায়া কবুল
হয়ে গেলো! কী দোষ ছিলো সুমনের?
কী
দোষ ছিলো আমার আর আমার সন্তানের!
আমি সুমনকে হারিয়ে ফেললাম! আমার ছেলে
তার বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না!
কেন আমার মতত দুখিনির কপালে সুখ এসেও
হারিয়ে গেলো! এসব ভাবতে গিয়ে সেদিন
আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাই।
তারপর.....
****
তিন বছরে ছেলে আমার লিমন অনেক বড়
হয়েছে। ওর বয়স এখন পাঁচ। একটা
কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।
টাকা আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে আমার
কাপড় সেলাই করা। আমি কাপড় বানিয়ে
টাকা আয় করি। শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম একটু
সাহায্যের জন্য। তারা আমাকে কোনরকম
সাহায্য তো করেইনি।বরং রাক্ষসী বলে
বিদায় করে দেয়। এবং বলে আমি সুমনকে
ধ্বংস করে ক্ষান্ত হইনি, বরং তাদেরকেও
শেষ করতে এসেছি। আমিমি তখন
অপমান,রাগ,ক্ষোভ,কষ্ট নিয়ে ফিরে আসি
আমার শূন্য ভুবনে!
লিসেনার'স_ডায়েরি।


Post a Comment

0 Comments